পাকড়া কাঠঠোকরা - NEWS ROOM

Breaking

Post Top Ad

Tuesday, September 13, 2022

পাকড়া কাঠঠোকরা

 পাকড়া কাঠঠোকরার ছবিটি সম্প্রতি তুলেছেন মনিরুল আইচ খান

পাকড়া কাঠঠোকরার ছবিটি সম্প্রতি তুলেছেন মনিরুল আইচ খান

দোতলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মাঝেমধ্যেই সুন্দর পাখিটিকে দেখতে পান তিনি। চিনতে না পারলেও অনুমান করেন, এটি অন্য প্রজাতির কোনো কাঠঠোকরা হবে। তাঁর বাড়ির আঙিনায় প্রায়ই আসে এক জোড়া সোনালি কাঠঠোকরাও, চেনেন তিনি। আঙিনা ও ছাদবাগানের কলার মোচায় বসে কলাফুলের ভেতরে ঠোঁট ঢুকিয়ে মধু পান করে পাখি দুটি। মাঝেমধ্যে ঘণ্টাধ্বনির মতো ডাক ছাড়ে।

অন্য প্রজাতির ছোট আকারের এই কাঠঠোকরার চালচলনও সোনালি কাঠঠোকরার মতো, তবে রং ভিন্ন ও আকারে ছোট। হালকা হলুদাভ গলা-বুক-পেট, তার ওপর অস্পষ্ট ছোপ ও দাগ। লেজের তলা লাল।

পিঠ ও লেজের উপরিভাগটা কালচে, তার ওপরে সাদা সাদা ছোট-বড় ছিটছোপ। মাথার তালু লাল। মুখমণ্ডল হলদেটে। পায়ের পাতা, আঙুল ও চোখা ঠোঁটটি ধূসরাভ। ঘাড়ে কালো টান।



খুব ভালোভাবে কাছ থেকে দেখে ও মুঠোফোনে ছবি তুলে তিনি আগস্টের শেষ সপ্তাহে ফোন করলেন আমাকে। ভদ্রলোকের নাম আবদুস সাত্তার মিয়া (৮০)। মুগদাপাড়ার ব্যাংক কলোনিতে সাত কাঠা জায়গার ওপর বাড়ি তাঁর।

বয়সে বড় হলেও তিনি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মাঝেমধ্যেই তাঁর বাসায় যাই আমরা কজন, নিছক আড্ডা মারতে। এককালের তুখোড় ব্যাংকার আবদুস সাত্তার মিয়া ইদানীং বার্ধক্যের কারণে বাইরে তেমন বের হন না। বাড়ির আঙিনা ও ছাদবাগানে আছে একটি বয়সী কাঁঠালগাছ ও কদমগাছ। ওই কদমের ডালে ২০২১ সালের মে মাসে বাসা করেছিল ছোট বসন্তবাউরি পাখি।

ওই ছবি ও বিষয় নিয়ে ‘করোনাকালের প্রশান্তি’ শিরোনামে লেখা ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় ১৭ মে ২০২১ সালে। এ ছাড়া আছে আমগাছ, নারকেল-সুপারি-চালতা-ড্রাগন ফল, কলা-পেঁপে-ক্যাকটাস, পেয়ারাসহ কয়েক রকম ফুলের গাছ। বছর তিনেক আগে এক জোড়া পাতিঘুঘুও বাসা করেছিল আঙিনার একটি গাছে। ওই বাড়ির আঙিনায় বছর দশেক আগেও ডাহুকের আনাগোনা ছিল। বুলবুলি-নীলটুনি-টুনটুনি-দোয়েল-শালিক প্রায়ই আসে আঙিনার গাছপালায় ও ছাদে। তিনি পাখি ও প্রকৃতিপ্রেমী।


পাখিটির ছবি যখন তোলেন আবদুস সাত্তার মিয়া, তখন সেটা কাঁঠালের ডালে ঠোঁট দিয়ে গর্ত খুঁড়ছিল খুব মনোযোগসহকারে। তিনি বুঝলেন, বাসা বানাবে। পাখিটিকে ছাদবাগানেও দেখেছেন, কলার ছড়ি ও মোচার ফুলেও ঝুলে বসতে দেখেছেন। শুনেছেন ‘কিক্ পিক পি পি’ ধরনের শাণিত ডাক, তবে কলাফুলের ভেতরে ঠোঁট ঢুকিয়ে মধু পান করতে দেখেননি।

সাত্তার মিয়া ছবি তুলেছিলেন পুরুষ পাখিটির, স্ত্রী পাখিটির মাথার চাঁদি হয় কালো। হ্যাঁ, এটি আমাদের দেশে সচরাচর দেখতে পাওয়া ‘পাকড়া কাঠঠোকরা’ বা ‘জরদ কাঠঠোকরা’। ইংরেজি নাম Fulvous-breasted Woodpecker। বৈজ্ঞানিক নাম Dendrocopos macei। দৈর্ঘ্য ১৯ সেন্টিমিটার। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় চলে।

গাছের ডাল-বাকলে ঠোঁট চালিয়ে ভেতরের গাছপোকা-শুঁয়াপোকা-লার্ভাসহ নানা রকম পোকামাকড় বের করে খায়। ভাঙা উইয়ের ঢিবির সন্ধান পেলে মাটিতে নেমে উইপোকা ও উইপোকার রসাল ডিম খায়।

প্রয়োজনে মাটিতে বসতে পারে এগুলো লেজের ওপর ভর করে, অনেকটাই সোজা হয়ে। লেজটি যেন তৃতীয় পা। এগুলো শুকনা গাছের ডাল, বাকল ও কাণ্ডে নিজেরাই গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে তিন থেকে পাঁচটি। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি পালা করে তা দেয় ডিমে। ডিম ফুটে ছানা হয় ৯ থেকে ১২ দিনে।

ঢাকা শহরে এই পাখি যথেষ্টসংখ্যক আছে।



No comments:

Post a Comment

Pages