সম্প্রতি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ট্যারান্টুলা নীহারিকার ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। পৃথিবী থেকে ১ লাখ ৬১ হাজার আলোকবর্ষ দূরে মিল্কিওয়ের উপ-গ্যালাক্সি লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউডে এর অবস্থান। নীহারিকাটির আরেক নাম, ৩০ ডোরাডাস।
বিভিন্ন আলোক টেলিস্কোপে এর উজ্জ্বল অংশগুলো মাকড়শার ছড়ানো পায়ের মতো দেখা যায়। এজন্য একে ডাকা হয় ট্যারান্টুলা নীহারিকা নামে।
ট্যারান্টুলা নীহারিকা নক্ষত্র জন্মের আতুরঘর হিসেবে বিজ্ঞানীদের কাছে সুপরিচিত। নক্ষত্রের গঠন ও বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করার জন্য উপযুক্ত স্থান এটাই।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে নীহারিকাটির ছবি তুলেছেন বিজ্ঞানীরা। ছবিতে নীহারিকা ও এর চারপাশের প্রায় ৩৪০ আলোবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত এলাকা দেখা যাচ্ছে।
ইনফ্রারেড আলোর কল্যাণে টারানটুলা নীহারিকার ধূলিমেঘের আড়ালে থাকা হাজারও তারার সন্ধান মিলেছে, যা এর আগে আলোক টেলিস্কোপে দেখা সম্ভব হয়নি।
নীহারিকাটির সবচেয়ে সক্রিয় অঞ্চলটিতে নবীন তারার মেলা দেখা যাচ্ছে। এখানকার প্রতিটি নীল বিন্দু একেকটি নক্ষত্র। এছাড়া উজ্জ্বল স্পাইকযুক্ত বিন্দুগুলো পৃথিবী থেকে অপেক্ষাকৃত কাছের নক্ষত্র। এসব নক্ষত্র থেকে বেরিয়ে আসা বিকিরণের কারণে এদের চারপাশের বেশকিছুটা অঞ্চলের ধূলিকণা দূরে সরে যায়।
এছাড়া পুরো নীহারিকায় প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোকার্বন ধূলিকণার মেঘ রয়েছে। ধুলিকণার মেঘ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কমলা ও সাদা রঙে। এসব ধূলিকণা থেকে জন্ম নেয় নক্ষত্র। নতুন তারা ছাড়াও দূরবর্তী গ্যালাক্সি, নেবুলার গ্যাস এবং ধূলিকণার গঠন ফুটে উঠেছে ওয়েবের এই ছবিতে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে ট্যারান্টুলা নীহারিকা আকর্ষণীয় হওয়ার আরেকটি বড় কারণ, এর পরিবেশ ও রাসায়নিক গঠন। মহাবিস্ফোরণের কয়েক বিলিয়ন বছর পর মহাবিশ্বে নক্ষত্র জন্মের যে পরিবেশ ছিলো, সেই একই পরিবেশ এখানে আছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এখানে যে হারে নতুন তারার জন্ম হচ্ছে, তা বিস্ময়কর। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্য কোথায় তারার জন্মহার এতো বেশি নেই।
নক্ষত্রের জন্মের এমন স্থানগুলোর মধ্য ট্যারান্টুলাই আমাদের সবচেয়ে কাছের। মহাবিশ্ব নক্ষত্র জন্মের স্বর্ণালী সময়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ট্যারান্টুলা নীহারিকার বিকল্প নেই। জেমস ওয়েবের মাধ্যমে সেই পর্যবেক্ষণ আরও সহজ হবে।
মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করছে। আধুনিক বিজ্ঞান নক্ষত্র সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য দিয়েছে আমাদের। এরপরও নক্ষত্র কীভাবে জন্ম নেয়, কীভাবে বিবর্তিত হয়, তার অনেক কিছুই অজানা আমাদের। ট্যারান্টুলা নীহারিকা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এসব অজানা রহস্যের সমাধান মিলবে। এমনটাই আশা বিজ্ঞানীদের।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট
No comments:
Post a Comment