আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স - NEWS ROOM

Breaking

Post Top Ad

Wednesday, September 14, 2022

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স

 

সাত দিন ধরে নিখোঁজ ইশান। কী হলো, কীভাবে হলো, কেন হলো, কেউ কিছু জানে না। বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ১০ কোটি টাকা উপহার দেবে বাংলাদেশ সরকার, ওকে যে খুঁজে পাবে তাকে।
ঈশান আবরার। তরুণ নোবেলজয়ী। এরই মধ্যে সে কাজ করেছে মহাকাশবিজ্ঞান, কণা পদার্থবিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ওপর। স্বাভাবিকভাবেই এমন কিংবদন্তির নিখোঁজ সংবাদ বিশ্বে তোলপাড় তুলবে। এ নিয়ে আবার ‘নানা মুনির নানা মত’। কেউ বলছেন, এটা বিরোধীদলীয় বিজ্ঞানীদের চক্রান্ত। আবার কেউ বলেছেন, ইশান নিজে থেকেই মেকি আত্মাহুতি দিয়েছে, আবার হয়তো ফিরে আসবে অসাধারণ কোনো বুদ্ধি নিয়ে। কিন্তু এ রকম মতামতের কোনোটি আদৌ সঠিক ছিল কি না, তা পৃথিবীবাসীর কাছে গোপন রাখা হয়েছিল। 

মাথার ভেতরটা দপদপ করছে। কোথায় ও কীভাবে সে এল, কিছুই জানে না ইশান। জানবেই-বা কীভাবে? ওর চোখ এখনো বন্ধ। মনে হচ্ছে ওকে অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে। কারণ, ইশান হাজার চেষ্টা করেও চোখ খোলা তো দূরের কথা, সামান্য আঙুলটাও নাড়াতে পারছে না। ধীরে ধীরে স্মৃতি ফিরে আসছে। হঠাৎ ওর মনে পড়ে, তাই তো! সেদিন ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় হঠাৎ ওর চোখ দুটো প্রচণ্ড ঘুমে ঢুলে পড়ে। এরপর চারপাশ ঝাপসা হয়ে আসে। তারপর ওর আর কিছু মনে নেই।

অনেকক্ষণ পর ইশান নিজের চোখ খুলতে পারে। স্বল্প আলোর এক করিডরে দাঁড়িয়ে। অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে। সার বেঁধে। সবাই বাঁধা। ইশান হঠাৎ আবিষ্কার করে, তাকেও একইভাবে বাঁধা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর একটা হিউমোবট হাঁটতে হাঁটতে ঢুকল করিডরে। সে একটা সুইচ চেপে সবাইকে মুক্ত করে দিয়ে বলল ওকে অনুসরণ করতে। ইশান হাঁটতে হাঁটতে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে। ওরা সংখ্যায় বড়জোর ৭০ জন। হিউমোবটটাও বেশ উন্নত মডেলের। এই মডেল নিয়ে সে ওই দিন কাজ করছিল।

‘তার মানে কেউ কি এই মডেলটা সফলভাবে বানিয়েছে?’ নিজেকে বলে ইশান। ওদের নিয়ে একটা হলঘরে ঢোকে রোবটটা। চারপাশে অনেক চেয়ার। বড় একটা মঞ্চে দাঁড়িয়ে একজন মানুষ। কিন্তু চাহনিটা বেশ যান্ত্রিক লোকটার। রোবট বলে মনে হলো ইশানের। সবাইকে বসার জন্য ইঙ্গিত করল লোকটা। ইশান কাছের চেয়ারটায় ধপ করে বসে পড়ল। কী হচ্ছে এসব? ও কোথায়?

গমগমে গলায় সামনের হিউমোবট–মার্কা মানুষ বলল, ‘সবাইকে কেপলার টুটুবির হিউমোবট কলোনির প্রথম মানব সম্মেলনে সাদরে স্বাগত জানাই।’



একটু বিরতি, এরপর আবার, ‘জানি কী ভাবছেন আপনারা। একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন, উত্তর দেব।’ বলেই প্যান্টের পকেট থেকে লেন্স বের করল। সেটা ওর শরীরের সঙ্গে লাগানো। ইশান নিশ্চিত হলো, লোকটা আসলেই হিউমোবট। হঠাৎ লেন্স ঠিকরে বেরিয়ে এল আলোকরশ্মি। হলোগ্রাফিক স্ক্রিন তৈরি করল সেটা। তার ভেতর থেকে একটা ঠান্ডা যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর ঘোষণা করল, ‘এই ক্লিপ তৈরি হয়েছে ২০৭০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি: কেপলার টুটুবির মানব কলোনির জন্য।’ তারপর স্ক্রিনে একের পর এক দৃশ্য ফুটে উঠতে লাগল। ‘পৃথিবী একদম দূষিত হয়ে যাচ্ছে, ধ্বংসের বেশি দিন বাকি নেই। এ জন্য পৃথিবীবরেণ্য ৬৫ জন বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীকে নির্বাচন করে গোপন মিশনের মাধ্যমে স্পেসে পাঠিয়ে দেওয়া হলো কেপলার টুটুবির উদ্দেশে। তাঁরা যত দিনে জেগে উঠবেন, পৃথিবীর আয়ু শেষ। মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই এই মিশনের আয়োজন করা হয়েছিল। তাঁদেরই এখন জাগানো হলো পৃথিবীর মতো গ্রহ কেপলার টুটুবিতে।’

হলোগ্রাফিক ভাষণ শেষ হলে মঞ্চের লোকটা বলল, ‘মানবসমাজের সর্বশেষ প্রতিনিধি আপনারা। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন ঘটনা কী? ৩০০ বছর ধরে আমরা হিউমোবটরা কেপলার টুটুবিতে মানব কলোনি বানাতে প্রয়োজনীয় কাজ করে আসছি, যাতে আপনারা মানবজাতিকে টিকিয়ে রাখতে পারেন। কিন্তু এখানে একটা “ছোট্ট” ব্যাপার আছে। আমরা হিউমোবটরা গত ৩০০ বছর কলুর বলদের মতো খেটে এখন আপনাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করব, আর আপনারা এখানে তার সুফল ভোগ করবেন, তা কী করে হয়? বিদায়, হে মানবজাতি! যাদের তোমরা করলে সৃষ্টি তারাই তোমাদের বিদায় জানিয়ে দিল মহাবিশ্ব থেকে।’ বলতে বলতেই লোকটা অদৃশ্য হয়ে গেল। হঠাৎ রুমের সব বাতি নিভে গেল। কোথায় যেন টুং করে শব্দ হলো একটা। যেন কেউ সিলিন্ডারের মুখটা পুরো খুলে দিয়েছে। ইশান অনুভব করে, শরীর কেমন যেন অবশ হয়ে আসছে। শ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। আশ্চর্য! ওর কোনো দিন শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল না। হঠাৎ সে বুঝতে পারে কী হয়েছে। কার্বন ডাই–অক্সাইড! হঠাৎ ওর দম বন্ধ হয়ে আসে। শ্বাস রোধ হয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মারা গেল ৬৫ জন মানুষ।

ঠিক তখন, মঙ্গল গ্রহের আন্ডারগ্রাউন্ড কলোনিতে বসে সব দেখছিলেন একজন লোক। মানুষগুলো মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। পেছনে ঘুরে দেখতে পেলেন সামনে ৬৫ জন লোক বসা। বললেন, ‘ইশানকে ধন্যবাদ। শেষ মুহূর্তে যদি ও ক্লোন করার ধারণাটা না দিত...তুমি একটা জিনিয়াস, ইশান!’ ইশান মাথা নাড়িয়ে ধন্যবাদের জবাব দিল। আবার বলল লোকটা, ‘তাহলে চলো, হিউমোবটগুলোকে আসল মানুষের পরিচয় দিয়ে আসি। ক্লোনদের রেডি করো!’ বাইরে দেখা গেল কয়েক শ একই চেহারার লোক দাঁড়িয়ে আছে অ্যাটমিক অস্ত্র হাতে। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল ‘আসল’ ইশান। তার সঙ্গে ৬৫ জন লোক একটা স্পেসশিপে কেপলার টুটুবির দিকে রওনা হচ্ছে। পেছনে একই চেহারার কয়েক শ মানুষ। ওরা তৈরি মানবজাতিকে বাঁচানোর সংগ্রামে নিজেদের সঁপে দিতে।

লেখক: দশম শ্রেণি, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল

No comments:

Post a Comment

Pages